চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায়
আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা।
১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ
পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘ সদর দফতরে স্পেন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল আয়োজিত
‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি
উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে এই গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট
রেটিং সিস্টেম পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আরো বলেন, কারণ,
এটি বর্তমানে অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধা সীমিত করেছে। আমরা
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একমত যে বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম অবশ্যই পর্যালোচনা
করা উচিত। বর্তমান রেটিং সিস্টেম অনেক নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধাকে
আরো সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, তাদের ভোটাধিকার,
কোটা এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবিএস) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে
(আইএফআইএস) প্রতিনিধিত্বের সীমা তাদের দর কষাকষির ক্ষমতাকেও ক্ষুন্ন করে।
তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রায়শই
আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সগুলোকে ব্যয়বহুল এবং নাগালের বাইরে দেখতে পাই। ঋণের ঝামেলা
এড়াতে আমরা উচ্চ-সুদের ঋণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ কখনই এর ঋণ পরিশোধে
খেলাপি হয়নি এবং আমরা সেই রেকর্ড বজায় রাখার আশা করি।”
আন্তর্জাতিক ফাইনান্সিয়াল আর্কিটেকচারের
জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ
করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের উন্নয়ন বিবরণী দেখায় যে, আমরা আমাদের
অংশ করতে পারি।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আর্থিক
ব্যবস্থার জন্য আমাদের প্রত্যাশার প্রতি সায় দেওয়ার সময় এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বীকার
করি যে আন্তর্জাতিক ফাইনান্সিয়াল আর্কিটেকচারের জরুরী সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কারের
প্রকৃতি ও পরিধির বিষয়ে এগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে
রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ।’
মহাসচিবের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী
আরো বলেন, ‘একটি মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন।’
এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাব
পেশ করেন। প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, এমডিবি, আইএফআই এবং বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থাগুলোকে
তাদের অগ্রাধিকারগুলো পুনরায় সাজাতে হবে এবং এসডিজি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের
সমস্যা মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত এবং তৃতীয় দফা সম্পর্কে তিনি
বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বল্প ব্যয়ে, রেয়াতি হারে তহবিলের পর্যাপ্ততা প্রয়োজন
এবং পছন্দসই উচ্চমানের বিপুল পরিমাণে অনুদান এবং সমস্ত ঋণদানের উপকরণগুলোতে দুর্যোগের
ধারা থাকতে হবে যাতে দুর্বল দেশগুলো সংকটকালের ধাক্কা সামলাতে পারে।
চতুর্থ দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ঋণদাতাদের মধ্যে
স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে ন্যায্য ও কার্যকর ঋণ হিসেবে ত্রাণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার
দিতে হবে।’
পঞ্চম এবং শেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, কোটার পরিবর্তে এসডিআর ঋণের সীমা প্রয়োজন এবং সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে হওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন
ধরে তার সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
হিসেবে বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা
করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুদ্রাস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনে ভারসাম্য এবং আমাদের উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের দারিদ্র্যের
হার ৪১.৯ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫.৫ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে
নামিয়ে এনেছি।’
এই সভা আহ্বান করায় শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান। এসময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিমেটিক অ্যামবেসেডর সায়মা ওয়াজেদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
- মা.ফা
মন্তব্য করুন