গত দুই বছরের তুলনায় এবার চট্টগ্রামে কিছুটা বেড়েছে কোরবানির
পশুর চামড়া সংগ্রহ। এবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০ পিস। এরমধ্যে
গরুর চামড়া সংগ্রহ করা হয় দুই লাখ ৯৭ হাজার ১৫০ পিস, মহিষের চামড়া ১২ হাজার ২০০
পিস এবং ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৬০০ পিস।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট
মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার জানান, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা গত বছরের
মতো এবারো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাকে
ট্রাকে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন। ফলে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তেমন
সুবিধা করতে পারেনি। গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর-দক্ষিণ থেকে অধিকাংশই
বিনামূল্যে এক লাখ পিসের মতো চামড়া সংগ্রহ করে এবং সংগৃহীত চামড়ার একটি বড় অংশ
নিজেদের ব্যবস্থাপনায় লবণযুক্ত করে সংরক্ষণ করে।
এদিকে চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে তাদের
এ বছর প্রচুর পরিমাণে লোকসান দিতে হয়েছে। আড়তদাররা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে
দেওয়া দরে চামড়া কিনেননি। অন্যান্য বছরের মতো সিন্ডিকেট করে পানির দরে চামড়া
কিনেছেন আড়তদাররা। তবে আড়তদাররা জানান, গতবারের চেয়ে এবার কিছুটা বাড়তি দামে চামড়া
কিনেছেন তারা।
এই বিষয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী
সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, নগরীতে আমরা যেসব চামড়া
সংরক্ষণ করেছি তার বাইরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় অনেক চামড়া লবণ দিয়ে মজুত
করে রাখা হয়েছে। এগুলো আস্তে আস্তে আমাদের আড়তে আসবে। এখানে গাউসিয়া কমিটিও ২০
হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহ করেছে। সেগুলো আমাদের সমিতির সদস্য মো. আলীর কাছে বিক্রি
করেছে। আমরা ন্যায্য দামেই চামড়া সংগ্রহ করেছি। আমাদের যতটুকু ধারণ ক্ষমতা বরং
তারচেয়ে বেশি চামড়া আমরা কিনেছি। বর্তমানে চট্টগ্রামে আড়তদারের সংখ্যা ২০ থেকে ২৫
জন। তাদের অনেকের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার পরেও চামড়া সংগ্রহ করেছেন। আমাদেরকে
প্রশাসন থেকে বারবার বলা হয়েছে যাতে চামড়া নষ্ট না হয়। সেজন্য আমরা অনেকেই ধার-দেনা
করে অতিরিক্ত চামড়া সংগ্রহ করেছি।
মুসলিম উদ্দিন আরো বলেন, সরকার নির্ধারিত যে মূল্য থাকে, সেই
দরে ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কিনেন। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা
সেটা না বুঝে তাদের ইচ্ছেমত দামে চামড়া কিনেছেন। পরে আড়তে বিক্রি করতে গিয়ে
চাহিদামত দাম না পাওয়ায় অভিযোগ তুলছেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি থেকে চামড়া
সংগ্রহ করেছেন। সেই চামড়া তিন-চার হাত ঘুরে আতুরার ডিপো এলাকার আড়তে আসে।
কোরবানিদাতা থেকে আড়তে আসতে-আসতে দাম অন্তত দু-তিন গুণ বেড়ে যায়। এবার কোনো চামড়া
নষ্ট হয়নি বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়ায় বড় ধরনের ধ্বস নেমেছিল। চামড়া বিক্রি করতে না পারায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে চামড়া ফেলে দিয়েছিলো মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, চামড়া সংগ্রহকারী বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন রাস্তা থেকে দেড় লক্ষাধিক চামড়া কুড়িয়ে নিয়ে ডাম্পিংয়ে ফেলে দিয়েছিল।
- মা.ফা.
মন্তব্য করুন