জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে আজ দুপুরে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড
: বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। চবি
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন
চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন
একুশে পদকপ্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক বাংলা একাডেমির সভাপতি জনাব সেলিনা হোসেন।
উপাচার্য তার বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীন-সার্বভৌম
বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসাথে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শহীদ জাতির
পিতার পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন,
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা
করা। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে বিশ্ব মানচিত্র থেকে
মুছে ফেলার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল হায়েনার দল। এ সকল নরপশুদের সে মনোবাসনা পূরণ
হয়নি, তারা নিজেরাই ইতিহাসের ঘৃণ্য কীট হিসেবে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বর্তমানে
জাতির পিতার স্বপ্ন ধাপে ধাপে পূরণ করে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক জনাব সেলিনা হোসেন
তার প্রবন্ধে বলেন, বাঙালির জীবনে শোক ও শক্তির নির্যাস আগস্ট মাস। বঙ্গবন্ধুর শারীরিক
মৃত্যু শোকের দহন। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও আদর্শের অমরত্ব শক্তির ঝর্ণাধারা - আগামী প্রজন্মের
অবিনাশী চেতনা। তিনি বলেন, ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ সময় ধরে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর
নেতৃত্বের অপেক্ষায় সময়ের পরিসর অতিক্রম করেছে। তিনিই উপমহাদেশের একমাত্র নেতা যিনি
উপমহাদেশের মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সংযোজন ঘটিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য
দিয়ে বিপথগামী কতিপয় ব্যক্তি ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পরিবর্তে এদেশে
মৌলবাদী এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে অব্যাহতভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে
পারবে। শত ষড়যন্ত্র এবং চেষ্টা করেও তাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবর্তে একুশ
বছর সংগ্রামের পর স্বাধীনতার স্বপক্ষ-শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালির ত্রাণকর্তা।
হাজার বছর ধরে বাঙালি এ ত্রাণকর্তার অপেক্ষায় ছিল। বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতির আবহমান
স্রোতে বঙ্গবন্ধু নতুন অভ্যুদয় ঘটিয়েছেন। বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশ একটি স্বাধীন
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণ রূপ লাভ করেছে। প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ
করেন, বিশ্বের সব মানুষের আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়নের সংগে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
করেছেন। এ প্রতিশ্রুতি থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন-নিপীড়ন-গণহত্যাসহ মানবাধিকার
লঙ্ঘনের প্রতিবাদে বাঙালির এগিয়ে চলার পথ প্রদর্শক হিসেবে অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়েছেন
বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা; মানবতার বার্তাটি ভিন্ন
জাতিসত্তার মানুষের সামনে থেকে মুছে দেননি। এখানেই বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘের ভাষণের পূর্ণতর
রূপ উঠে এসেছে। বিশ্ব তাকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের দিকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড
তাঁকে ইতিহাস থেকে সরিয়ে দিতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবেনা। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের নাম
উচ্চারিত হবে না।
চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. সেলিনা
আখতারের সভাপতিত্বে সেমিনারে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন চবি লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর
মো. রুহুল আমিন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী।
চবি শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি এবং সেমিনার উপ-কমিটির আহবায়ক প্রফেসর আবদুল হকের সঞ্চালনায়
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সজীব কুমার
ঘোষ। সেমিনারে জনাব সেলিনা হোসেনের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আনোয়ার হোসেন, চবি
শিক্ষক সমিতির সদস্যবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
- অ.হো
মন্তব্য করুন