বাংলাদেশের বিশাল
সমুদ্র অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমুদ্রভিত্তিক শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনের জন্য
শক্তিশালী নৌবাহিনীর কোন বিকল্প নেই বলে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সমুদ্রসীমা
সুরক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নেভাল এভিয়েশনে সংযোজিত হলো আধুনিক আরও ২টি মেরিটাইম প্যাট্রোল
এয়ারক্রাফট (এমপিএ)।
৩০ অক্টোবর রবিবার
গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে
চট্টগ্রাম নেভাল এভিয়েশন হ্যাঙ্গারে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এমপিএ ২টি সংযোজন এবং নৌবাহিনীর
রীতি অনুযায়ী নামফলক উন্মেচন করেন।
আধুনিক সেন্সর
ও মিশন ইকুইপমেন্ট সম্বলিত নতুন ২টি ডর্নিয়ার ২২৮ এনজি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট
ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২২৩ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। নবসংযোজিত এমপিএ ২টি প্রায় ৫
ঘন্টা একনাগাড়ে উড্ডয়ণের মাধ্যমে আমাদের সম্পূর্ণ এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন সহজেই নজরদারি
করতে পারবে। নতুন এমপিএ ২টিতে গভীর সমুদ্রে নজরদারী পরিচালনার জন্য যুক্ত রয়েছে সার্ভেইল্যান্স
রাডার, ইলেক্ট্রা অপটিক ইনফ্রারেড ক্যামেরা, ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিঙ্ক ও সার্চ এন্ড
রেসকিউ ডিটেকশন ফাইন্ডার। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত মিশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
এবং জাহাজ ও সাবমেরিনের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে এমপিএ
দুইটিতে। এই এমপিএসমূহ কমান্ড প্লাটফর্ম হিসেবে দেশের সমুদ্রসীমার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ,
সুনীল অর্থনীতির সুরক্ষায় যে কোন ধরণের অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে কার্যকর ভূমিকা
পালন করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের পর হতেই ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে বাংলাদেশ
নৌবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত
উন্নয়ন, নৌবহরে যুদ্ধজাহাজ সংযোজন, বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি
এবং অপারেশনাল এভিয়েশন উইং গঠনসহ বিভিন্ন বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জাতির
পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষানীতির আলোকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী হিসেবে
গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ
নৌবাহিনীতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আধুনিক যুদ্ধজাহাজ, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট
এবং সাবমেরিনসহ আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের
বিশাল সমুদ্র অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমুদ্র ভিত্তিক শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনের
জন্য শক্তিশালী নৌবাহিনীর কোন বিকল্প নেই। এই নতুন ২টি এমপিএ সংযোজনের মাধ্যমে নেভাল
এভিয়েশনের সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং এর মাধ্যমে স্বল্প সময়ে দ্রুততার সাথে
বাংলাদেশের সুবিশাল সমুদ্রসীমা টহল প্রদান করা আরও সহজতর হবে। এ সকল এমপিএ বাংলাদেশের
স্বাধীন জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতির নিরাপত্তা রক্ষার্থে
অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। ইতোমধ্যেই,
এমপিএ ও হেলিকপ্টার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত বিভিন্ন
অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা
রক্ষা ও চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য নৌবাহিনীর সদস্যদের কঠোর
পরিশ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী
আরো বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি বর্তমান সরকার দেশের অর্থনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক
উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। দেশকে উন্নয়নশীল
দেশে রূপান্তরিত করতে বর্তমান সরকার নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনের অংশ হিসেবে ডেল্টা
প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সর্বোপরি দেশের ব্লু-ইকোনমি কার্যক্রমসমূহ ত্বরান্বিত
করা হয়েছে। এসকল কার্যক্রমের নিরাপত্তা ও নজরদারীতে নৌবাহিনীর এমপিএসমূহ গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখছে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী
ভিডিও টেলিকনফারেন্সে যুক্ত হলে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল তাঁকে স্বাগত
জানান। এসময় নেভাল এভিয়েশনের একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নৌ সদর দপ্তরের পিএসওগণ, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য নৌ
অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডারগণ এবং উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য ২০১৩
সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মত ২টি এমপিএ নেভাল এভিয়েশনে সংযোজন করেন।
এর মধ্য দিয়ে নৌবাহিনীর নেভাল এভিয়েশন এমপিএ স্কোয়াড্রনে মোট ৪টি মেরিটাইম প্যাট্রোল
এয়ারক্রাফট অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করলো।
- ই.হো
মন্তব্য করুন